December 13, 2025

ঝিনাইদহ নিউজ

সবার আগে সর্বশেষ…!

ঝিনাইদহ নিউজ: তালিকা নিয়ে জটিলতার কারনে ঝিনাইদহ জেলায় প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের নিকট থেকে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান চলছে ধীরগতিতে। জেলার ৬ টি উপজেলার মধ্যে তিনটিতে এখনও এই ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরুই করা সম্ভব হয়নি। অন্য তিন উপজেলায় শুরু হলেও তার পরিমান খুবই কম। জেলা খাদ্য বিভাগ বলছেন ২৫৪০ মেঃ টর ধান সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এখন পর্যন্ত (৩০ মে) তারা মাত্র ৩০৪ মেঃ টন ধান ক্রয় করেছেন। যা লক্ষ্যমাত্রার শতকারা ১১.৯৬ মেঃ টন।

কৃষকরা বলছেন, সরকারি ভাবে কবে ধান নেওয়া হবে সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করা তাদের পক্ষে কখনও সম্ভব নয়। কারণ ধারদেনা করে বেশির ভাগ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক ধান চাষ করে থাকেন। যারা ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাড়িতে একের পর এক হালখাতার চিঠি এসে যায়। তাছাড়া সামনে ঈদ। বাধ্য হয়ে তারা কম মুল্যেই ধান বিক্রি করেছেন। বেশির ভাগ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের ঘরে ধান নেই। সরকার যখন ধান ক্রয় করবেন তখন ধান চলে যাবে ব্যবসায়ীদের ঘরে। ফলে সরকারের এই সুবিধা তারাই ভোগ করবেন।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, এ বছর জেলার ৬ উপজেলায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ২শত মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। আর প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক রয়েছেন ৭২ হাজার ৪৫৮ জন।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জি.এম আব্দুর রউফ জানান, সরকারি গুদামে ধান বিক্রির জন্য ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝ থেকে ৬ হাজার ৩৮৬ জন আগ্রহী কৃষকের তালিকা খাদ্য বিভাগকে দিয়েছেন।
আর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাকিব সাদ সাইফুল ইসলাম জানান, তারা ২০ মে থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করেছেন। নিয়ম রয়েছে কৃষক গুদামে ধান নিয়ে আসবেন, কর্মকর্তারা সেগুলো যাচাই করে সংগ্রহ উপযোগি হলে ক্রয় করবেন। কিন্তু এ বছর বাজারের চেয়ে সরকারি মুল্য কিছুটা বেশি থাকায় ওই নিয়মে ধান ক্রয় সম্ভব হচ্ছে না। কৃষক যাচাই করে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। আর কৃষক যাচাই করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকা করা হচ্ছে। যে তালিকা করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তিনি আরো জানান, একদফা তালিকা জমা দিয়ে আবার ফেরত নেওয়া হয়েছে। এখনও সবগুলো উপজেলার তালিকা চুড়ান্ত হয়নি, যে কারনে ধান ক্রয় বিলম্ব হচ্ছে। সদর, কালীগঞ্জ ও হরিনাকুন্ডু উপজেলায় ধান ক্রয় শুরু হয়েছে। কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও শৈলকুপায় দ্রুত শুরু হবে। তিনি আরো জানান, তালিকার বিষয়টি ইতিমধ্যে খাদ্য মন্ত্রনালয়কে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করেছেন্। তবে দাবি করেন গোটা জুন মাস ধান ক্রয় করা হবে।

জেলার বেশ কয়েকটি ধানের বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত সপ্তাহে যে পরিমান ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক ধান বিক্রির জন্য বাজারে এসেছিল, শুক্রবার তা অনেকটা কমে এসেছে। বেশিরভাগ কৃষকের ধান বিক্রি হয়ে গেছে। কালীগঞ্জ শহরের ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে তারা বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন। মে মাসে ঘুর্ণিঝড় ফনী আঘাত নিয়ে সংকিত কৃষক দ্রুতই ক্ষেতের ধান কেটে নেন। তিনি জানান, ধান কাটার পরই বিক্রি শুরু হয়। কারন তার মতো ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা বেশির ভাগই ধার-দেনাই চাষ করেন। ধান ঘরে আসা মাত্রই দেনা পরিশোধের চাপ ছিল।

তেতুলতলা বাজারে আসা বেড়বাড়ি গ্রামের আক্কাচ বিশ্বাস জানান, ৫ বিঘা জমিতে তিনি ধান চাষ করেছিলেন। বিঘাতে ২৪ মন ধান পেয়েছেন। এক বিঘা জমিতে ধান চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার টাকা। ৬৬০ থেকে ৬৭০ টাকা মন দরে ধান বিক্রি করে পাচ্ছেন ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সার-ঔষধের টাকা পরিশোধ করতে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। সরকারি ঘরে বেশি টাকায় ধান বিক্রির অপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এখন তার বিক্রি করার মতো আর ধান নেই। বাগডাঙ্গা গ্রামের শতদল বিশ্বাস জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। নিজের খাওয়ার ধান রেখে সব বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, একেতো ধার-দেনা তারপর ঈদুল ফিতর। পরিবারের সদস্যদের কেনাকাটা রয়েছে। তাই ঘরে ধান রাখা সম্ভব হয়নি। সুরাট গ্রামের মাজেদুল ইসলাম জানান, ৪ বিঘা জমিতে ধান করেছিলেন। একটু বেশি দাম পাবেন আশায় কিছু ধান রেখে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, মহেশপুরে তালিকা নিয়ে একটু সমস্যা রয়েছে। বাকিগুলোর সমস্যা থাকার কথা নয়। সদর, কালীগঞ্জ ও হরিনাকুন্ডু উপজেলায় ধান ক্রয় চলছে। বর্তমান গতিতে ধান ক্রয় অব্যহত থাকলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের ঘরে ধান থাকার সম্ভাবনা কম স্বীকার করে বিসয়টি যাতে দ্রুত করা যায় সেটা দেখবেন বলে জাননা। অবশ্য শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওসমান গনী জানান, তিনি কৃষকের নিকট থেকে কিছু ধান ক্রয় করেছেন। আশা করছেন ঈদের পূর্বেই ধান ক্রয় করে ফেলবেন।

তালিকা বিষয়ে জটিলতা নিয়ে ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) সাংসদ শফিকুল আজম খাঁন বলেন, কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয় করতে হবে। তিনি খাদ্য বিভাগকে জটিলতা সৃষ্টি না করে নিয়ম মেনে দ্রুত কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয় করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *