মাছ আহরণ ১৪৫ টন, টার্গেট ২০০ টন, দুর্নীতি ও আত্মসাতের অভিযোগ
1 min readকোটচাঁদপুরের বলুহর বাঁওড়ে যশোর মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের এবারো টার্গেট এবারো ফেল করেছে। ২০০ টন মাছ আহরণের টার্গেট ধার্য করে ফিশিং মওসুম শুরু করা হলেও মাছ আহরণ ও বিপণন (বিক্রি) দেখানো হয়েছে ১৪৫ টন। গত মওসুমেও একইভাবে টার্গেট ফেল হয়। লাগাতার আগের কয়েক মওসুমে চলছে একই অবস্থা। এ নিয়ে সচতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের এ বাঁওড়টির আয়তন ২৮৬ হেক্টর। এখানে তিন শতাধিক টন মাছ উৎপাদন হয়। কিন্তু প্রতি বছর মওসুম শুরুর সাথে সাথে শুরু হয় লাগামহীন দুনীর্তি, লুটপাট ও আত্মসাতের মহোৎসব।
অভিযোগ রয়েছে, গত মওসুমেও দুর্নীতি করে মাছ বিক্রির মাধ্যমে বাঁওড়ের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বাঁওড়ের নিয়ম অনুযায়ী, মৎসজীবীরা বাঁওড় থেকে মাছ আহরণের পর নির্দিষ্ট ল্যান্ডিং পয়েন্টে মাছ উত্তোলন করবে। এরপর এলাকার জনগণের চাহিদা অনুযায়ী ওপেন বিক্রি করে উদ্বৃত্ত মাছ লোকাল বাজারে বিক্রি করতে হবে। বাজারে মাছ বিক্রির জন্য নেয়ার েেত্র নিয়ম হচ্ছে মাছের জাত ও গ্রেড আলাদা করে, ওজন নির্ধারণ এবং সোটা চালানের মাধ্যমে নিজস্ব আইস ভ্যানে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হবে। কিন্তু ম্যানেজার সিদ্দিক আহম্মদ কোনো নিয়মকানুন না মেনে নিজের খেয়াল-খুশিমতো আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওজন না করে রাতের অন্ধকারে মাছ বস্তায় ভরে পিকআপ ভ্যানে তুলে বার বাজার, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়াসহ আশপাশের বাজারগুলোয় নিয়ে গেছেন। সেখানে সরকারি রেটের অতিরিক্ত দ্বিগুণ বা কখনো তিন গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি হিসাবে দেখানো হয়েছে নিম্ন মুল্য।
এলাকার মানুষের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাছ কেনার অধিকার দিয়ে যে নিয়ম করা হয়েছে, সে েেত্র মাছ কেনার কোনো সুযোগ এলাকার সাধারণ মানুষের নেই। গোপনে মাছ তুলে বাজারে নিয়ে কখন বিক্রি করা হয় সে খবর এলাকার মানুষ জানতে পারে না। মাঝে মধ্যে দুই-এক দিন লোক দেখানো এবং নিয়মের দায় এড়াতে ছোট ছোট মাছ বিক্রি করা হয়। সেখানেও মাছের দাম নেয়া হয় তাদের মর্জিমাফিক। বাঁওড়ের কর্তৃপরে নির্ধারিত রেট দেখানো হয় না।
নিয়ম রয়েছে, রেট প্রকাশ্যে টানিয়ে রাখতে হবে। সাইজ এবং বিভিন্নজাতের মাছের আলাদা আলাদা রেট থাকলেও তা তাদের গোপন পকেটে। এ নিয়ে এলাকার মানুষের অভিযোগ এবং দাবি থাকলেও তা প্রকাশ্যে দেখানো হচ্ছে না। বিক্রীত মাছের রসিদ দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা দেয়া হয় না। এলাকার মানুষ বাঁওড়ে নিয়ে নানাভাবে লাঞ্ছিত ও নাজেহাল হওয়ার ভয়ে মনের কষ্টে মাছ কিনতে বাঁওড়ে যেতে চান না। শুধু মতাসীন দলের বিশেষ বিশেষ লোকজনকে হাতে রেখে এবং তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় বর্তমান ম্যানেজার বাঁওড়টি পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কোনো মাছ বিক্রির শতকরা ৪০ ভাগ মৎস্যজীবীদের পাওনা।
এক্ষেত্রে মৎস্যজীবী কিছু নেতাদের ম্যানেজ করে সরকারি অংশের বড় বড় রুই-কাতলা মাছ উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা হয়। এভাবে প্রতি মওসুমে বেশি দামের রুই-কাতলা মাছকে সিলভার কার্প বা গাস কার্প বানিয়ে লাখ লাখ টাকা প্রতি বছর আত্মসাৎ হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে বাঁওড়ের মৎসজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত হালদারের বলেন, আমাদের কিছুই করার নেই। সব কিছু করা হয় বাঁওড় ম্যানেজারের নির্দেশে। তিনি বলেছেন, এ বাঁওড়ে ২০০ টন মাছ উৎপাদনের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আমি মনে করি সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে অনায়াসে ৩০০ টন মাছ উৎপাদন ল্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।
অন্য দিকে বাঁওড় ম্যানেজার সিদ্দিক আহম্মদ বরাবরই অনিয়মের কথা অস্বীকার করেন। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন কারণে ল্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি।