Sat. May 4th, 2024

ঝিনাইদহ নিউজ

সবার আগে সর্বশেষ

ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ ছোট ক্যাম্পাস, বড় স্বপ্ন

1 min read
ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ ছোট ক্যাম্পাস, বড় স্বপ্ন

ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ ছোট ক্যাম্পাস, বড় স্বপ্ন

ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ ছোট ক্যাম্পাস, বড় স্বপ্ন
ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ ছোট ক্যাম্পাস, বড় স্বপ্ন

নাম সরকারি কেশব চন্দ্র কলেজ হলেও স্থানীয় লোকজনের মুখে মুখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কেসি কলেজ নামেই পরিচিত। ঝিনাইদহের এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা তাঁদের কলেজজীবন নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট। পড়ালেখার ভালো পরিবেশ আছে। সহশিক্ষা কার্যক্রমেও সারা বছর কম–বেশি ক্যাম্পাস সরব থাকে। আফসোস হলো, উন্মুক্ত জায়গা নেই। নেই খেলাধুলা করার মতো কোনো মাঠ। তবু ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে এই ক্যাম্পাস খুব আপন।

প্রতিষ্ঠালগ্নঃ ১৯৬০ সালের ১৭ মার্চ সেই সময়ের শিক্ষানুরাগীদের প্রচেষ্টায় কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ঝিনাইদহ মহকুমার তৎকালীন এসডিও এম কে আনোয়ার কলেজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। পূর্বে মাগুরা, পশ্চিমে চুয়াডাঙ্গা, উত্তরে কুষ্টিয়া আর দক্ষিণে যশোর—চারপাশ থেকে বহু শিক্ষার্থী আসতে শুরু করেন এই প্রতিষ্ঠানে। ১৯৮০ সালে কলেজটি সরকারীকরণ হয়। বর্তমানে কেসি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, ডিগ্রি (পাসকোর্স), ১৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও ৫টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর চালু আছে।
কলেজের মোট জমির পরিমাণ ১২ একর। এর মধ্যে মূল ক্যাম্পাসটি দাঁড়িয়ে আছে মাত্র ৩ একর ৫ শতক জমির ওপর। বাকি জমি ক্যাম্পাসের বাইরে। যেখানে আছে একটি ছাত্রাবাস, একটি ছাত্রীনিবাস, একটি পুকুর, আবাদি, পরিত্যক্ত ও বেদখল জমি। ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ যখন প্রতিষ্ঠা করা হয়, সেই সময় ঝিনাইদহ জেলায় এটিই ছিল উচ্চশিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। কলেজে রাজনীতি আছে, তবে হানাহানি নেই। বিভিন্ন পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ফলও ভালো।

কলেজে জায়গার সংকটঃ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঘুরেফিরে বারবার একটি সমস্যার কথাই বললেন। কলেজে জায়গার খুব অভাব। বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য ভবনের সিঁড়ি কিংবা আশপাশের জায়গাগুলোই শিক্ষার্থীদের ভরসা। জায়গা ও ক্লাসরুমের সংকটের কথা বললেন কলেজের শিক্ষক মো. মহব্বত হোসেনও। তিনি বলেন, ‘এনাম কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগে ১৩ জন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু আমাদের কলেজে ৫টি বিভাগে ৮ জন আর বাকিগুলোতে ৪ জন করে শিক্ষক আছেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।’

শিক্ষার্থীরা আফসোস করে বললেন, এখানে মিলনায়তন নেই, নেই মুক্তমঞ্চ। খেলাধুলা নিয়মিত আয়োজন করা হয় না। ছাত্র সংসদ নেই প্রায় ১১ বছর ধরে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতেও কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতা খুব একটা পাওয়া যায় না।

চলছে কথন সাংস্কৃতিক সংসদের কর্মীদের আলোচনাঃ ঝিনাইদহ কেসি কলেজ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯০ সালে সর্বপ্রথম গোধূলি নামের একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। মাত্র ছয় মাস পর তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর দুই বছর পর ফারুকুল ইসলাম ও তারিকুল ইসলাম নামে দুই শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে কথন আবৃত্তি একাডেমি। সেটিও এক বছরের বেশি টেকেনি।

২০০৮ সালে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র সাকিব মোহাম্মদ আল হাসান গড়ে তোলেন কথন সাংস্কৃতিক সংসদ (কসাস)। এই সংগঠনটিই এখনো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কসাসের বর্তমান সভাপতি রানা কর্মকার জানালেন, তাঁদের সংগঠন ছাড়াও সরকারি কেসি কলেজ থিয়েটার গ্রুপ, ডিবেটিং সোসাইটি ও বাঁধন নামের তিনটি সংগঠন আছে। রানা বলেন, ‘মাত্র ১০ জন ছেলেমেয়ে নিয়ে কসাসের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে সংগঠনটির সদস্যসংখ্যা শতাধিক। কার্যনির্বাহী কমিটিতে আছেন ২১ জন।’ কসাস নিয়মিত বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ ছাড়া তাদের রয়েছে নিয়মিত প্রকাশনা। তারা রক্তদান করেন, শীতার্ত ব্যক্তিদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। সবই হয় সংগঠনের সদস্যদের মাসিক চাঁদার অর্থে। ব্র্যাক ও এটিএন আয়োজিত ২০১০ সালের দেয়াল পত্রিকা উৎসবে দেশে সেরা হয়েছিল কসাস।

সরকারি কেসি কলেজ থিয়েটার গ্রুপের সভাপতি আল-আমিন বলেন, ‘আমরা মঞ্চের সৈনিক, নাটক আমাদের সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার—স্লোগানে ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আমাদের যাত্রা শুরু। এখন সদস্যসংখ্যা ৪০। আমরা বিভিন্ন সময়ে কলেজ ক্যাম্পাসে নাটক মঞ্চস্থ করেছি। কলেজের বাইরেও আমরা নাটক করি। এ পর্যন্ত আমাদের করা নাটকের সংখ্যা ছয়।’

পাঠগ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, গার্ল-ইন-রোভার ও রেড ক্রিসেন্টের মতো সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন।

অধ্যক্ষ বি এম রেজাউল করিম জানান, সরকারি কেসি কলেজ একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আমাদের এখানে কোনো হানাহানি নেই। নিয়মিত পাঠদান চলছে। পড়ালেখার মানও ভালো। ক্যাম্পাসের জায়গা কম সেটা ঠিক। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছি। শিক্ষক ও কর্মচারীসংকটও রয়েছে। সরকারিভাবে এগুলো সমাধান করা সম্ভব হলে কলেজের পড়ালেখার মান আরও ভালো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *