Sun. May 5th, 2024

ঝিনাইদহ নিউজ

সবার আগে সর্বশেষ

মহেশপুরের শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী কবিরের গল্প

1 min read

মহেশপুরের শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী কবিরের গল্প

মহেশপুরের শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী কবিরের গল্প
মহেশপুরের শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী কবিরের গল্প

সম্পূর্ণরুপে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও বাধা অতিক্রম করে চলেছে মহেশপুরের সংগ্রাম আহমেদ কবির (১৪)। সাফল্যের  তার আঁকা ছবি স্থান পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত ঈদ-উল-ফিতরের ঈদ শুভেচ্ছা কার্ডে। কবির পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকার চেক ও ক্রেস্ট।সংগ্রাম আহমেদ কবির মহেশপুর উপজেলার গোয়ালহুদা গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে। সে কোন কথা বলতে ও শুনতেও পারেন না। সবকিছু ইশারার মাধ্যমে বুঝে নেয় সে। স্কুল সুত্রে জানা গেছে, পড়শোনায় প্রবল উচ্চার কারণে নয় বছর বয়সে ২০১০ সালে খালিশপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২০১৪ সালে সাফল্যের সাথে ৫ম শ্রেণী শেষ করে। যখন সে ২য় শ্রেণীতে, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কাছ থেকে ছবি আঁকার অনুপ্রেরনা পেয়েছেন। আর তখন থেকেই শুরু হয় কবিরের ছবি আঁকা। দিনের পর দিন করতে থাকে উন্নতি। এরপর ৩য় শ্রেণীতে উঠে ছবি আঁকায় প্রথম হয় উপজেলা পর্যায়ে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মোছা তাসলিমা খাতুন জানান, তিনি জানতেন না কিভাবে কবিরকে অক্ষরজ্ঞান দিবেন। সে (কবির) কোন শুনতে ও বলতেও পারেন না। তাই তাকে বর্ণমালা শেখানো ছিল আমার জন্য অনেক কষ্টের বিষয়। স্কুলের অন্য শিক্ষকরা বাড়ি থেকে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ আনতেন। একপাশে ছবি রাখতেন আর অন্য পাশে ছবিটির বানান লিখতেন। এভাবে চেষ্টার পর কবিরকে অক্ষরজ্ঞান দেওয়া হয়। এখন ইশারা করে কবিরকে যাই বলা হোক না কেন সে সবকিছু লিখতে পারে।
তিনি আরো জানান, কবির স্কুলে প্রায় ৩০০ ছবি এঁকেছে। এছাড়া সে মাছ ধরার উপকরণ, কাগজের ফুল, খেলনা তৈরি করে গ্রামের ছেলে মেয়েদের কাছে বিক্রি করে। কবির একটা জিনিস একবার দেখলে পুরো বিষয়টি খুব অল্প সময়ে আয়ত্ব করতে পারে। কবিরের কম্পিউটার শেখার ভীষণ ইচ্ছা।

প্রধান শিক্ষিকা জানান, আমি মুলত তাকে ছবি আঁকতে কিভাবে রঙের মিশ্রণ শেখাতাম। প্রধানত, আমার উদ্দেশ্য ছিল যাতে সে সাইনবোর্ড ও ছবি এঁেক ভবিষ্যতে কিছু উপার্জন করতে পারে। এরপর ২০১৫ সালের মে মাসে কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিস প্রতিবন্ধীদের আঁকা ছবি গ্রহণ করতে চায়। জুন মাসে আমি কবিরের আঁকা প্রাকৃতিক দৃশ্যেও একটি ছবি মহেশপুর উপজলা নির্বাহী অফিসার নাসিমা খাতুনের কাছে প্রদান করি এবং সেই ছবি ২০১৫ ঈদ-উল-ফিতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ শুভেচ্ছা কার্ডে স্থান করে নেয়।

এরপর, গত সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে চিঠি আসে কবিরের কাছে। সে অনুযায়ী, অক্টোবর মাসের ১১ তারিখে কবির ও তার মা প্রধানমন্ত্রীর অফিসে। কিন্তু অন্য একটি অনুষ্ঠান নির্ধারিত থাকায় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরষ্কার নেওয়া হলো কবিরের। এরপর প্রধানমন্ত্রীর এ্যাসাইনমেন্ট অফিসার মোঃ শামীম মুশফিক কবিরের হাতে ১ লক্ষ টাকার চেক ও ক্রেস্ট তুলে দেন।
কবিরের মা রেখা খাতুন জানান, কবিরের যখন ৮ বছর বয়স তখন সে কাঠি ও আঙুল দিয়ে মাটিতে বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকতেন। ধীরে ধীরে সে বিভিন্ন খেলনা তৈরি করতে থাকে। এলাকার ছেলেমেয়েরা স্কুল ড্রেস ও ব্যাগ ঘাড়ে করে স্কুলে যেত তখন কবির স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রায়ই কান্নাকাটি করতো। সর্বশেষ কবিরের আগ্রহ দেখে আমি, ২০১০ সালে খালিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যায়। প্রধান শিক্ষিকা ও অন্য শিক্ষকদের চেষ্টায় কবির অক্ষরজ্ঞান অর্জন করে।

তিনি আরো জানান, কবির হাতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খেলনা ও পাটকাঠি দিয়ে তৈরি গরুর গাড়ি স্কুল ও এলাকার ছেলেমেয়েদের কাছে বিক্রি করে। এভাবে  ৩ হাজার ৫’শ চল্লিশ টাকা জমিয়েছে যা দিয়ে সে একটি কম্পিউটার কিনবে। ইতিমধ্যে সে প্রতিবেশীর কাছ থেকে কম্পিউটার চালানো শিখছে। মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল ইসলাম জানান, তিনি কিছুদিন আগে যোগদান করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে দেখবেন বলে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *