Sun. May 5th, 2024

ঝিনাইদহ নিউজ

সবার আগে সর্বশেষ

মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় দুই পা হারালেন বাবা

1 min read

মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় দুই পা হারালেন বাবা

মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় দুই পা হারালেন বাবা
মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় দুই পা হারালেন বাবা
যশোর সরকারি মহিলা কলেজ অনার্সের ছাত্রী শারমিন আক্তার ও স্থানীয় একটি স্কুলের ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী শাহানাজ আক্তার। আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই দুই বোনকে বিরক্ত করে আসছিল তাদের গ্রামের প্রভাবশালী মাহাবুব মেম্বরের ছেলে আজমসহ আরো কয়েকজন। বিষয়টি গ্রামের কয়েক জনকে জানান শারমিনের বাবা শাহানুর বিশ্বাস। এতে ক্ষিপ্ত হয় প্রভাবশালী ওই পরিবারের সদস্যরা।এরপর তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে গত ১৬ অক্টোবর সকালে শাহানুরকে বেধড়ক মারপিট করে তারা। লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলা হয় দুই পা। এখানেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গুরুতর জখম করা হয় শরীরের বিভিন্ন অংশ। মৃত ভেবে ফেলে যাওয়া হলে সেখান থেকে শাহানুরকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।
একপর্যায়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা শাহানুরের দুই পা কেটে ফেলেন। চিরতরে পঙ্গু শাহানুর এখন হাসপাতালের বিছানায় চোখের পানি ফেলছেন। বর্তমানে তিনি পঙ্গু হাসপাতালের বি ওয়ার্ডের ৬১ নং বেডে চিকিৎসাধীন।কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এরপরও থেমে নেই প্রভাব শালী ওই পরিবারের সদস্যরা। ভুক্তভোগীরা যেন মামলা করতে না পারে এ কারণে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করেছে শাহানুরের পরিবারের সদস্যদের। অসহায় এই পরিবারের সদস্যরা এখন আত্মীয় স্বজনদের বাসায় বসবাস করছেন।হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১০ নং কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের নলভাঙ্গা গ্রামে ঘটলেও প্রভাব শালী এই পরিবারের টিকি ছুঁতে পারেনি স্থানীয় থানা পুলিশ।সরকারি দলের নেতা হওয়ার কারণে তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ দুই পা হারিয়েও ভুক্ত ভোগী এই পরিবারের সদস্যরাই উল্টো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রত্যন্ত এলাকার এই ঘটনাটি জনসম্মুখে না আসার কারণে বিচারহীনতায় ভুগছে একটি অসহায় পরিবার।
জানতে চাইলে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুল হকও জানান, দুইপক্ষের মারামারি হয়েছিল বলে আমার কাছে তথ্য রয়েছে। তবে থানায় এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ না করায় পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ অ্যাকশনে যাবে।
 
কৃষক শাহানুর বিশ্বাসের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে শারমিন আক্তার যশোর সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স বাঙলা বিভাগে অধ্যায়নরত। ছোট মেয়ে শাহানাজ আক্তার স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী। তাদের আসা যাওয়ার পথে ওই গ্রামের মাহাবুব মেম্বরের ছেলে আজম ও তার সহযোগীরা বিরক্ত করে আসছিল।
 
এ নিয়ে গ্রামে কয়েকজনের কাছে বিচার দেন শাহানুর। বিষয়টি নিয়ে ক্ষিপ্ত হন মাহাবুব ও বর্তমান মেম্বর কামাল।অভিযোগ রয়েছে এটি ছিল শাহানুরের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর একটি অজুহাত। এরপর তাকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে রাস্তায় ফেলে যান। স্থানীয় অনেকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদেরও মারপিট করার হুমকি দেওয়া হয়। পাশাপাশি শাহানুরকে বিএনপির কর্মী বলে আখ্যা দেওয়া হয়।
খবর পেয়ে শাহানুরের স্ত্রী ও দুই মেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। পঙ্গু হাসপাতাল থেকে দুই পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হলে তারা শাহানুরকে নিয়ে স্কয়ার হাসপাতালে যান। সেখানেও পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়।এরপর তারা কয়েকটি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে পুনরায় তাকে পঙ্গুতে নিয়ে আসলে দুই পা কেটে ফেলা হয়। ফলে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান শাহানুর। এরমধ্যে জায়গা জমি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েন শাহানুর।
খবর পেয়ে পঙ্গু হাসপাতালে ছুটে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল করিম আনার। তিনি ৫ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা করেন। পাশাপাশি আইনি সহায়তার কথাও বলেন। কিন্তু ২০দিন পরও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি।অভিযোগ রয়েছে হাসলাকারীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিন সঙ্গে জড়িত। এ কারণে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।শাহানুরের বড় মেয়ে শারমিন আক্তার জানান, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার বাবাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। তাদের পক্ষ নিয়ে প্রতিবাদ করার কারণে ওই গ্রামের ওসমান, ফরিদসহ আরো কয়েকজন বাড়ি ছাড়া। এছাড়া গ্রামের তার বৃদ্ধার দাদির সঙ্গে রয়েছে ছোট বোন শাহানাজ আক্তার। তাকে স্কুলে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ‘বলা হচ্ছে বাসা থেকে বের হলে তোকেও বাবার পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
পাশাপাশি মামলা না করার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে তারাও বাড়ি যেতে পারছেন না। থানায় মামলা করলে আমাদের দুই বোনকে ক্ষতি করা হবে বলে প্রতিদিনই লোক মারফত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে প্রভাব শালীরা।তিনি বলেন, তারা বড় ফুপা একটি অভিযোগ নিয়ে বারবার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু তাদের অভিযোগ রাখা হয়নি।বারবাজার ফাঁড়ির দারোগা নজরুল খারাপ ব্যবহার করে তার ফুপাকে ফাঁড়ি থেকে বের করে দেন।তার ফুপাকে হুমকি দিয়ে বলা হয় ‘তোমরা মামলা করলে তারাও মামলা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *