Fri. Oct 11th, 2024

ঝিনাইদহ নিউজ

সবার আগে সর্বশেষ

প্রকৃত পক্ষে এই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কার জন্য?

1 min read
মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর ফিরোজ।

মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর ফিরোজ।

মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর ফিরোজ।
মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর ফিরোজ।
৪ বছরের অভিজ্ঞাতায় আমার ধারণা জন্মেছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আমার মত একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে সাহায্যের ব্যাপারে আগ্রহী নয়, তারা অনেক বেশি আগ্রহী কীভাবে আরও একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে সনদ দেয়া যায়।’ এভাবেই নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ছোট কামার কুন্ডুগ্রামের মৃত আবু বকরের ছেলে আবু জাফর ফিরোজ।

তিনি জানান, ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত চারবার আবেদন করেছেন। চার বছরে ২০ বার সচিবালয়ে গেছেন। বর্তমান সচিবসহ পাঁচজন যুগ্ম সচিবের সঙ্গে কথাও হয়েছে। প্রথম দিকে কথাবার্তায় একটু আন্তরিক হয়ে সবাই বলতেন, আপনার মত একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার জন্য আমরা সব কিছু করবো, কিন্তু আস্তে আস্তে সুর পাল্টে যায়।

১৯৭১ সালে ভারতের বিহার রাজ্যের চাকুলিয়া থেকে মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং শেষ করে ৮ নং সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন তিনি। ২০১৫ সালে ঝিনাইদহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাহী সদস্যও নির্বাচিত হন। ভারতীয় তালিকা ও মুক্তিবাত্রায় তার নাম রয়েছে। সেখানে তিনি ফরম পূরণ করেছিলেন ইংরেজিতে। তবে মুক্তিবাত্রায় নাম দুইভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এক জায়গায় ফিরোজ আর অন্য জায়গায় ফিরোজ আহামেদ। পিতার নাম এক জায়গায় আবু বক্কর অন্য জায়গায় আবু বাকের লেখা হয়েছে।

তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে সপরিবারে নিহত হলে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। যার কারণে বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে একটি ব্রিটিশ জাহাজে চাকরি নেন। তারপর এ জাহাজ থেকে ও জাহাজে নানা দেশ ঘুরে অবশেষে ১৯৮১ সালে আমেরিকার নরফোক বন্দরে এসে পৌঁছান।

জাহাজ থেকে পালিয়ে চলে যান ইমিগ্রান্টের স্বপ্নের শহর নিউইয়র্কে। পরে ১৯৮৮ সালের শেষ দিকে গ্রিনকার্ড পাওয়ার পর আবার আমেরিকায় পড়াশোনা শুরু করে ১৯৯২/৯৩ সালে ন্যাশনাল ডিনস লিস্টে জায়গা করে নেন এবং ১৯৯৬ সালে আমেরিকার ফরেন সার্ভিস পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন।

এই কৃতিত্বের জন্য আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন তাকে মার্কিন সিনেটে অনুমোদন করে ফরেন সার্ভিসের মনোনয়ন দেন। ফলে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আমেরিকার ডিপ্লোম্যাট সার্ভিসে যোগ দিয়ে কুয়েত, জেনাভা, তিউনিশিয়াসহ নানা দেশে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন শেষে ২০১১ সালে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।

বর্তমানে আবু জাফর ফিরোজ বেশির ভাগ সময় দেশেই কাটান। ২০১৫ সালে ঝিনাইদহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন। তাছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর মনজুর আহমেদ ও বানপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজুর রহমানের (পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান) অত্যন্ত সুপরিচিত ছিলেন।

এই জীবন সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা তাই অভিমানের সুরে বলেন, আমার মত একজন সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধাকে যদি দিনের পর দিন এভাবে ঘুরানো হয়, তাহলে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের কী অবস্থা ? প্রকৃত পক্ষে এই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কার জন্য?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *