Fri. May 17th, 2024

ঝিনাইদহ নিউজ

সবার আগে সর্বশেষ

ঝিনাইদহে কৃষকদের এবার সিনজেনটার সানশাইন বীজে সর্বনাশ !

1 min read

ঝিনাইদহে কৃষকদের এবার সিনজেনটার সানশাইন বীজে সর্বনাশ !

ঝিনাইদহে কৃষকদের এবার সিনজেনটার সানশাইন বীজে সর্বনাশ !
ঝিনাইদহে কৃষকদের এবার সিনজেনটার সানশাইন বীজে সর্বনাশ !

সিনজেনটা কোম্পানীর সানশাইন বীজ রোপন করে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর এলাকার কৃষকদের বারোটা বেজে গেছে। বীজ বপন করে হাতাশ কৃষকরা। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বলরামপুর ও মুরুটিয়া গ্রামের মাঠে অসংখ্য কৃষকের ক্ষেতের করুন অবস্থা। একটি ভুট্রা গাছ থেকে অসংখ্য গাছ বের হওয়ার কারণে কৃষকের চোখেমুখে হতাশার ছাপ।

কৃষক সাহেব আলী এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। আশা ছিল ৪০ মন ভুট্টা পাবেন। কিন্তু ভুট্টা ক্ষেতে অজ্ঞাত রোগ দেখা দেওয়ায় আদৌও ফলন পাবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।

একই অবস্থা হযরত আলীর। তার তিন বিঘা জমির পুরোটায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম। কৃষকরা বলছেন, একটা ভুট্টা বীজ থেকে একটা গাছ হয়ে থাকে। কিন্তু সিনজেনটা কোম্পানীর সানশাইন বীজ ব্যবহার করায় তাদের ক্ষেতের ভুট্টার মূল গাছের পাশ থেকে আরো ৩/৪ টি গাছ বেরিয়েছে। এই গাছ ভেঙ্গে দিলেও আবারো বের হচ্ছে। এতে মূল গাছের শক্তি থাকছে না। যার কারনে ভুট্টার ফলন ঠিকমতো হবে না।

ওই দুই গ্রামে গিয়ে একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, অক্টোবর মাসের দিকে ভুট্টা চাষ শুরু হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ভুট্টা তাদের ঘরে আসে। এক বিঘা জমি চাষ করতে তাদের ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর এক বিঘা জমিতে ৪০ মন পর্যন্ত ভুট্টা পাওয়া যায়। যা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা মন দরে বিক্রি করলে তাদের ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হয়।

কৃষকরা জানান, এবছর তারা ভুট্টা বীজ রোপন করে এক থেকে দেড় ফুট লম্বা হয়েছে। চলছে জমির আগাছা পরিষ্কার আর সেচ দেওয়ার কাজ। কিন্তু তারা লক্ষ্য করছেন অনেক ক্ষেতে ভ্রট্টার একটি গাছ থেকে আরো অনেকগুলো গাছ বের হচ্ছে। এই অবস্থা সিনজেনটা কোম্পানীর সানশাইন বীজ যারা ব্যবহার করেছেন তাদের প্রায় সবার।

বলরামপুর গ্রামের কৃষক সাহেব আলী জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে সানশাইন ভুট্টার চাষ করেছেন। ক্ষেতের সমস্ত গাছের গোড়া থেকে আরো একাধিক গাছ গজাচ্ছে। কৃষি বিভাগের লোকজন এগুলোকে সাকার বা কুসি বলছেন। তিনি জানান, গত ৮ থেকে ১০ দিন পূর্বে হঠাৎ দেখতে পান তার ক্ষেত্রের গাছগুলোর গোড়া (মাটির নিচ) থেকে একাধিক চারা বের হচ্ছে। এই অবস্থা দেখে চিন্তিত হয়ে ছুটে যান কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে। তারা কুসিগুলো ভেঙ্গে দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি জানান, একটা বীজ থেকে একটাই গাছ হবে, সেখানে একাধিক গাছ হলে মূল গাছ শক্তি হারিয়ে ফেলছে। এতে ওই গাছে ভুট্টার ভালো ফলন হবে না।

সাহেব আলী আরো জানান, তাদের গ্রামের ১৭ জন কৃষক এই জাতের চাষ করেছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনের ক্ষেতে এই অবস্থা ইতোমধ্যে ধরা পড়েছে। বাকি ৭ জনের ক্ষেতে গাছগুলো সবে বড় হচ্ছে। পাশের মুরুটিয়া গ্রামের ১৫ জন কৃষকের ক্ষেতে এই জাতের চাষ হয়েছে। তাদের অনেকের ক্ষেতে এই অবস্থা দেখা দিয়েছে। জমির পরিমানটা সঠিক ভাবে কৃষকরা বলতে না পারলেও আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ বিঘা হবে বলে জানিয়েছেন।

সানশাইন জাতের সব ক্ষেতের একই অবস্থা বলে জানান কৃষকরা। এ ব্যাপারে সিনজেনটা কোম্পানীর কোটচাঁদপুর এরিয়ার কর্মকর্তা মহাসিন আলীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, শুধু তাদের কোম্পানীর বীজে এটা হয়েছে তা ঠিক নয়। অন্য কোম্পানীর বীজেও হয়েছে। এটা আবহাওয়ার সমস্যায় হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কৃষকদের তারা বলেছেন, পাশের গাছগুলো নষ্ট করে চাষ ধরে রাখতে।

এতে ফলন কম হলে তারা ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা করবেন। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক শেখ আকরামুল হক জানান, তিনি ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। ৭ জন কৃষকের তিন একর জমিতে এই সমস্যা হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, কৃষকদের মূল গাছ রেখে পাশের গাছগুলো ভেঙ্গে দেবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আশা করছেন এতে ফলনের খুব একটা ক্ষতি হবে না। তাছাড়া কৃষকের ক্ষতি হলে ক্ষতি পূরনের আশ^াসও দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষন করছেন বলে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *