Sun. May 5th, 2024

ঝিনাইদহ নিউজ

সবার আগে সর্বশেষ

বীরঙ্গনা জয়গুন নেছা স্বীকৃতি পান নি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে

1 min read
বীরঙ্গনা জয়গুন নেছা স্বীকৃতি পান নি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে

বীরঙ্গনা জয়গুন নেছা স্বীকৃতি পান নি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে

বীরঙ্গনা জয়গুন নেছা স্বীকৃতি পান নি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে
বীরঙ্গনা জয়গুন নেছা স্বীকৃতি পান নি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে

বীরঙ্গনা জয়গুন নেছা স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজের স্বামী হাবিবুর রহমান ও সতিনের যুবতী মেয়ে হাসিনা খাতুনকে হারিয়েছেন।  ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চনগর পাড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। পাক সেনারা তাদের ধরে নিয়ে আর ফেরৎ দেয়নি। নিজের উপর পাক বাহিনীর পাশবিক নির্যাতন ও বর্বরতার সেই নিকষকালো মুহুর্তগুলোর কথা মনে হলে গাঁ শিউরে ওঠে তার। শরীরে দগদগে সেই ভায়াল স্মৃতি চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

যুদ্ধ শেষে স্বামীর কেনা ভিটা বাড়িও জবর দখল করে নিয়েছেন সুন্দর আলী নামে এক ব্যক্তি। এতো কিছুর পরও এই বীরঙ্গনার কপালে মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি। পান না কোন সরকারী সুযোগ সুবিধা। একমাত্র সম্বল ছিল চাকরীর পেনশন, তাও বিক্রি করে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রমানে এই বৃদ্ধ বয়সে সার্টিফিকেট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ছুটছেন এ অফিস থেকে সে অফিস। সব বিফলে গেছে জয়গুন নেছার।ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এসে জয়গুন নেছা বাস্পরুদ্ধ কন্ঠে সাংবাদিকদের এ সব কথা জানান।

জয়গুন নেছার কাছে থাকা কাগজপত্র ঘেটে জানা গেছে, তিনি পাক বাহিনীর হাতে নির্যাতিত একজন নারী। পরে তিনি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। যুদ্ধ করেন ৮ নং সেক্টরে। যুদ্ধের আগে তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে চাকরী করেন। সে সময় ক্যাডেট কলেজের একমাত্র সিভিল প্রিন্সিপাল আব্দুল করিম সাহেব তাঁর চাকরীটি দেন। দেশ স্বধীনের পর তিনি মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চাকরী করতেন। যুদ্ধকালীন সময় তার উপর রাজাকার ও পাক বাহিনী নির্যাতন করেছেন ব্যাপক। সেই স্মৃতি এখনো পীড়া দেয় জয়গুন নেছার।

দেশীয় রাজাকারদের নির্যাতনে হাত থেকে ডাঃ কে আহম্মেদ ও মাহাতাব হোসেন মাখন মিয়া বিভিন্ন সময় রক্ষা করেছেন। পবহাটীর রওশন ও আব্দুর রহিম, দুধসরের মজিবর, ব্যাপারীপাড়ার নুরুন্নবী ছামদানী ও হিরেডাঙ্গা গ্রামের মোস্তফা রাজাকারের নাম উল্লেখ করেন জয়গুন নেছা।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের (অর্ন্তভুক্ত) প্রশাসনিক কর্মকর্তা খোন্দকার নুরুল ইসলাম ও তত্ববধায়ক এম এ আব্দুল ওহাব সাক্ষিরিত তালিকায় তার নাম রয়েছে ১৭ নং ক্রমিকে। এ ছাড়া ২০০৯ সালের ২৫ আগষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই করতে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসককে একটি চিঠি দেয়। জেলা প্রশাসকের চিঠির প্রেক্ষিতে ২০১০ সালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হক খান তথ্য প্রমানের ভিত্তিত্বে একটি তালিকা করেন। ২০১০ সালের ২৫ মে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৪৮৮ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রনয়ন করে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেই তালিকায় জয়গুন নেছার নাম রয়েছে ১৭১ নং ক্রমিকে।

জয়গুন নেছা যে দাবীদার একজন মুক্তিযোদ্ধা সেই আবেদন পত্রে মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসন, আব্দুল মজিদ, লুৎফর রহমান ও পরিতোষ ঘোষ সাক্ষি দিয়েছেন। জয়গুন নেছার কাছে মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সোসাইটির সনদ ও সরকারের দেশ রক্ষা বিভাগ থেকে দেওয়া স্বাধীনতা সংগ্রাম সনদ রয়েছে। তাতে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানীর সাক্ষর রয়েছে।

বীরঙ্গনা জয়গুন নেছা দ্রুত তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির দাবী জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তার স্বামীর কেনা ভিটেবাড়ি একজন বেদখল করেছেন। সেটি যেন তাকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। জয়গুন নেছার প্রতিবেশি ঝিনাইদহ পেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক কালেকন্ঠর জেলা প্রতিনিধি এম সাইফুল মাবুদ জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় জয়গুন নেছা ও তার পরিবারের যতেষ্ট অবদান রয়েছে।

ঝিনাইদহ পেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সমকাল প্রতিনিধি মাহমুদ হাসান টিপু জানান, জয়গুন নেছা তাদের প্রতিবেশি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ও তার পরিবারের উপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়। অথচ জয়গুনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আজো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এটা দুঃখ জনক ব্যাপার।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আলহাজ্ব মোঃ কামালুজ্জামান বলেন, জয়গুন নেছা একজন স্বীকৃতি প্রাপ্ত মৃক্তিযোদ্ধা এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি যুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বহু আগেই তার নাম তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু কি কারণে হয়নি তা আমি দেখছি। তিনি বলেন, আমি জয়গুন নেছার কাগজপত্র নিজে সচিব মহোদয়ের কাছে দিয়েছি। হওয়ার কথাও ছিল। ঢাকায় গিয়ে বিষয়টি দেখা হবে বলে কামালুজ্জামান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *